বাস্তব জীবনে সকালে ঘুম হতে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন
ধরনের সংখ্যা দেখতে পাই। চলো নিচের ছবিগুলো লক্ষ করি-
এই যে নানারকম সংখ্যা দেখতে পাচ্ছ, এগুলো কীভাবে মানুষ জানল? ভেবে দেখ তো? আজ থেকে অনেক
অনেক বছর আগে তারা কীভাবে সংখ্যা লিখত এবং গণনা করত?
এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে সংখ্যার গল্পে। চলো তাহলে সংখ্যাগুলো কীভাবে এলো সেই মজার কাহিনি শুনি।
কয়েক হাজার বছর আগে আমরা ফিরে যাই, যখন মানুষ খাদ্যের জন্য কেবল শিকার বা বনের ফলমূলের উপর নির্ভর করত- তখন সে সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠত পাখির ডাকে। তারপর হয়ত নদীর জলে মুখ ধুয়ে খাদ্যের সন্ধানে বের হতো।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে কয়েক হাজার বছর আগের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সংখ্যা গণনা ও ব্যবহারের পার্থক্য আছে কি?
চলো তাহলে প্রাচীনকালে মানুষ কীভাবে দাগ কেটে, দড়ির গিট দিয়ে বা পাথর ব্যবহার করে বিভিন্ন উপায়ে সংখ্যা গণনা করত তার কিছু নমুনা দেখে নেই।
বিভিন্ন সময়ের মানুষ ৮ সংখ্যাটি উপরের ছবির মতো করে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে দাগ কেটে প্রকাশ করত।
৮ সংখ্যাটি প্রকাশ করার এরকম আরও কোনো উপায় কি তোমরা বলতে পারবে?
তোমরা কি জানো ইনকা সভ্যতার মানুষেরা দড়ির গিট দিয়ে সংখ্যা প্রকাশ করত?
নিচের ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে কি?
কোন ঘড়িতে সময় কত?
সংখ্যা | ঘড়িতে কীভাবে লেখা আছে | সংখ্যা | ঘড়িতে কীভাবে লেখা আছে |
---|---|---|---|
১ | ৭ | ||
২ | ৮ | ||
৩ | ৯ | ||
৪ | ১০ | ||
৫ | ১১ | ||
৬ | ১২ |
এবার বলো তো ঘড়ির সংখ্যা লেখার পদ্ধতি অনুসারে ১৩, ২০, ৬৭ সংখ্যাগুলো কীভাবে লেখা হবে?
মায়ানরা কীভাবে সংখ্যা লিখত জানো?
নিচের সারণিটি পূরণ করতে পারবে?
০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ এই মোট দশটা চিহ্ন দিয়ে সংখ্যা তৈরি করার যে পদ্ধতিটা ভারতীয় উপমহাদেশের
গণিতবিদ আর্যভট্ট বের করেছিলেন সেটিকে আমরা দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি বলি।
চলো এবারে গল্পের মতো করেই শুনি কীভাবে আর্যভট্ট এই পদ্ধতির চিন্তা করেছিলেন।
আর্যভট্ট ভাবলেন, ‘আমি যদি সংখ্যাকে প্রকাশ করতে চাই তাহলে নিচের মতো করে প্রকাশ করব।’
এরপর উনি লিখলেন:
0 | ১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
---|
এখন উনি ভাবলেন, ‘আমার কাছে যতগুলো চিহ্ন ছিল সব একবার করে লেখা শেষ। এখন যদি একটু খেয়াল
করি তাহলে দেখব রোমান পদ্ধতির মতো প্রত্যেকটা সংখ্যা এক এক করে বাড়তে থাকে। অর্থাৎ ১ এর সাথে ১
যোগ করলে ২ পাব আবার ২ এর সাথে ১ যোগ করলে ৩ পাব। এখন যদি আমি আবার লিখতে থাকি তাহলে
৯ এর পরে কী লিখব।
১ম বার লেখা শেষ:
0 | ১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
০ ?? |
‘কিন্তু আমি যে সবগুলোর চিহ্ন একবার ব্যবহার করেছি সেটা তো সংখ্যায় লিখতে হবে। সেটা আমি কোথায়
লিখব।’
0 | ১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১০ |
সংখ্যাগুলো লিখা শেষ এটা বুঝাতে শুন্য লিখলাম এবং ১ লিখলাম প্রত্যেকটি সংখ্যার বাম পাশে কারণ
একবার করে লেখা শেষ হয়েছে। এরপর তিনি বললেন, ‘শুধু ১ এবং ১০ এ ০ এর বাম পাশের ১ কিন্তু একই
অর্থ প্রকাশ করে না। অর্থাৎ এদের মান কিন্তু এক নয়। কারণ ১০ এ ০ এর বাম পাশের ১ বলছে আমরা সবগুলো
সংখ্যা একবার লিখে ফেলেছি। এখন যদি আমি আবার একবারের পর এভাবে লিখতে থাকি তাহলে কী হবে?’
0 | ১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ |
২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ |
এখানে ২০ এর ২ আর ১২ এর ২ কিংবা শুধু ২ এর মান কিন্তু একই না। আমরা যখন রোমান সংখ্যায় XX
লিখি তাহলে ১০ আর ১০ যোগ করে ২০ বুঝাচ্ছি কিন্তু আমাদের এই নিয়মে ১০ লিখলে ১ আর ০ যোগ করে
কিন্তু ১ বুঝাচ্ছে না। তিনি কিন্তু তখনও এইসব সংখ্যার নাম দেননি। তিনি বুঝালেন যে আমি সবগুলো প্রতীক
কতবার লিখছি সেটা বুঝানোর জন্য সেই সংখ্যাটা বসাচ্ছি। এভাবে তিনি কত পর্যন্ত লিখতে পারবেন?
তাহলে যে ৯টি প্রতীক আছে সবগুলো দিয়ে দুইবার যদি নানাভাবে লিখি তাহলে আমরা ৯৯ পর্যন্ত লিখতে
পারবো। এরপর উনি আবার আটকে গেলেন যে এরপর কী করা যায়। এরপর তিনি চিন্তা করলেন এই পদ্ধতিতে
যে সংখ্যা পর্যন্ত লিখলাম তাকে আরেকবার লিখি। অর্থাৎ আরেকবার লিখতে হলে আমাদের আবার ০ থেকে
শুরু করতে হবে এবং সেটা আমাকে বলতে হবে।
এরপর আমরা যদি খেয়াল করি উপরে লেখা বামের অঙ্কগুলোতে, তাহলে দেখব, সেখানেও আমরা একবার
করে ৯ বার সবগুলো প্রতীক লিখে ফেলেছি। অতএব আমাকে আরেকটা শুন্য বসাতে হবে।
এখন আর বাম পাশে যদি ১ লিখি তাহলে,
এই ১০০ এর বাম পাশের ১ কিন্তু দুই অঙ্কের সংখ্যার বামের সংখ্যাগুলো কয়বার লেখা হয়েছে তা প্রকাশ
করছে। কিন্তু দুই অঙ্কের সংখ্যার ডান পাশের সংখ্যাগুলো কী দিয়ে প্রকাশ করছে? এরপর একটি নাম দিলেন।
এরপর তিনি দুই অঙ্কের সংখ্যার বামের সংখ্যাটিকে দশক এবং তিন সংখ্যার বামের সংখ্যাটিকে শতক বলে
নাম দেন। অর্থাৎ আমরা যদি দেখি প্রথম ১ টার দশ গুণ হয়ে গেলো ১০ এবং ১০ এর দশ গুণ হয়ে গেলো ১০০।
এখান থেকে একটি চমৎকার জিনিস উনি খেয়াল করলেন যে, ‘আমি যদি সংখ্যাগুলোকে পাশাপাশি লিখতে
থাকি এবং আমি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে আসি তবে সংখ্যাটা ১০ গুণ বাড়ে। এখন কিন্তু আমরা শিখে
ফেললাম এবং তিন সংখ্যায় আমি ৯৯৯ পর্যন্ত লিখতে পারবো এবং এর পর আরও আবার এক ঘর বামে
বাড়বে। এভাবে যতবার স্থানের পরিবর্তন হবে ততবার ১০ গুণ হয়ে বাড়তে থাকবে। এভাবে গণনার চিন্তা
থেকেই আসলে দশমিক পদ্ধতিটা আসলো। আমরা যদি এখন দেখি যে প্রত্যেক বার স্থান পরিবর্তনে ১০ গুণ
করে বেড়ে যাচ্ছে এবং সেইটাই সংখ্যা পদ্ধতি। আমাদের হাতের ১০টি আঙ্গুল দিয়ে ০ থেকে ৯ পযর্ন্ত এই
দশটা চিহ্ন বা প্রতীককে দেখানো বা প্রকাশ করা যায়।
আমরা এইযে ১ - ৯ পর্যন্ত সংখ্যা দেখছি ওরা নিজেরাই একটা কিছু প্রকাশ করে অর্থাৎ ওদের দাম আছে।
তবে এককভাবে ০ এর কোনো দাম বা মূল্য নেই, তাই ০ কে অন্য কোনো সংখ্যার সঙ্গে থাকতে হয়। এজন্য
০ কে বলা হয় সহকারী বা ইংরেজিতে auxiliary । আর ১-৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলোকে বলা হয় সার্থক অঙ্ক বা
ইংরেজিতে significant number । আমরা এই অধ্যায়ের প্রথমদিকে রোমান সংখ্যার(XX বা XC) কথা বলেছি।
এভাবে পাশপাশি সংখ্যা লেখাকে বলা হয় সংখ্যা পাতন বা notation । কোনো সংখ্যা যদি আমরা লিখতে চাই
তাহলে আমরা ০-৯ এই চিহ্নগুলোকে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে লিখবো; যে পদ্ধতিতে প্রতিবার যখন সংখ্যাটা
বাম দিকে আসবে তখন সেটা তার থেকে ১০ গুণ বেড়ে যাবে।
তাহলে এখন আমরা দেখি,
একটি সংখ্যা ১২৩
এখানে তিনটি অঙ্ক আছে এবং তিনি ডান থেকে একক, দশক, শতক এভাবে প্রতিটির একটি করে নাম
দিয়েছেন।
১ | ২ | ৩ |
শতক | দশক | একক |
এটা পড়ার সময় আমাদের পড়তে হবে: ১ শতক ২ দশক ৩ একক।
সংখ্যাটার সত্যিকারের মান হবে:
একটা শতক (১০০) + দুইটা দশক(২০) + তিনটা একক(৩) = একশত তেইশ (১২৩)।
এভাবে আমরা সংখ্যাগুলো লিখতে শুরু করলাম এবং লেখার ফলে কিন্তু আমরা দশমিক পদ্ধতি পেয়ে গেলাম।
কোটি | লক্ষ | হাজার | শতক | দশক | একক | ||
---|---|---|---|---|---|---|---|
নিযুত | লক্ষ | অযুত | হাজার | ||||
অষ্টম | সপ্তম | ষষ্ঠ | পঞ্চম | চতুর্থ | তৃতীয় | দ্বিতীয় | প্রথম |
১ | ৩ | ০ | ৮ | ২ | ৫ | ২ | ৪ |
এক কোটি ত্রিশ লক্ষ বিরাশি হাজার পাঁচশত চব্বিশ
বিলিয়ন | মিলিয়ন | হাজার | শতক | দশক | একক | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
দ্বাদশ তম | একাদশ তম | দশম | নবম | অষ্টম | সপ্তম | ষষ্ঠ | পঞ্চম | চতুর্থ | তৃতীয় | দ্বিতীয় | প্রথম |
২ | ৪ | ৪ | ২ | ১ | ৩ | ০ | ৮ | ২ | ৫ | ২ | ৪ |
দুইশত চুয়াল্লিশ বিলিয়ন দুইশত তেরো মিলিয়ন বিরাশি হাজার পাঁচশত চব্বিশ
লক্ষ | হাজার | শতক | দশক | একক | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
? | ? | ? | ? | কোটি | নিযুত | লক্ষ | অযুত | হাজার | |||
দ্বাদশ তম | একাদশ তম | দশম | নবম | অষ্টম | সপ্তম | ষষ্ঠ | পঞ্চম | চতুর্থ | তৃতীয় | দ্বিতীয় | প্রথম |
২ | ৪ | ৪ | ২ | ১ | ৩ | ০ | ৮ | ২ | ৫ | ২ | ৪ |
বিলিয়ন | মিলিয়ন | হাজার | শতক | দশক | একক |
উপরের সংখ্যাটিকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় রীতিতে প্রকাশ করো।
দেশীয় রীতিতে কোটির উপরে আরও কিছু কি আছে?
খুঁজে বের করার দায়িত্ব তোমাদের। তোমাদের শিক্ষক, অভিভাবক, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু সবার সাথে আলোচনা করতে পার।
০ | ১ | ১ | ২ |
৩ | ৫ | ৬ | ৭ |
৪ | ৮ | ৮ | ৯ |
২ | ৬ | ০ | ৮ |
১) পুনরাবৃত্তি না করে নিচের অঙ্ক গুলো ব্যবহার করে চার অঙ্কের বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম সংখ্যা তৈরি করো।
ক) ২, ৮, ৭, ৪ খ) ৯, ৭, ৪, ১ গ) ৪, ৭, ৫, ০ ঘ) ১, ৭, ৬, ২ ঙ) ৫, ৪, ০, ২
(সংকেত: ০৭৫৪ কিন্তু তিন অঙ্কের একটি সংখ্যা)
২) যে কোনো একটি অঙ্ক দুইবার ব্যবহার করে বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম সংখ্যা তৈরি করো।
ক) ৩, ৮, ৭ খ) ৯, ০, ৫ গ) ০, ৪, ৯ ঘ) ৮, ৫, ১
(সংকেত: দুইবার ব্যবহার করা যায় এমন যতগুলো শর্ত আছে সেগুলো চিন্তা করো)
৩) নিচের শর্তগুশর্ত লো পূরণ করে যে কোনো চারটি ভিন্ন অঙ্ক ব্যবহার করে বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম সংখ্যা তৈরি করো। (প্রথমটি সমাধান করে দেওয়া হলো)
ক) ৭ অঙ্কটি এককের স্থানে থাকবে।
বৃহত্তম | ৯ | ৮ | ৬ | ৭ |
ক্ষুদ্রতম | ১ | ০ | ২ | ৭ |
(সংখ্যাটি ০ দিয়ে শুরু হতে পারবে না। কেন?)
খ) ৪ অঙ্কটি সবসময় দশকের স্থানে থাকবে।
বৃহত্তম | ৪ | |||
ক্ষুদ্রতম | ৪ |
গ) ৯ অঙ্কটি সবসময় শতকের স্থানে থাকবে।
বৃহত্তম | ৯ | |||
ক্ষুদ্রতম | ৯ |
ঘ) ১ অঙ্কটি সবসময় হাজারের স্থানে থাকবে।
বৃহত্তম | ৯ | |||
ক্ষুদ্রতম | ৯ |
ছবির বাক্সে তোমার জন্মদিনের জন্য একটা উপহার রয়েছে। তবে সমস্যা হলো বাক্সটি একটা তালা দিয়ে বন্ধ করা আছে। তালার ঠিক নিচেই ০ থেকে ৯ পর্যন্ত অঙ্কগুলি লিখা আছে। তালা খুলতে প্রয়োজন তিনটি অঙ্ক দিয়ে তৈরি একটি গোপন সংখ্যা। নিচের কাগজে লিখা আছে সেই গোপন সংখ্যার নানা বৈশিষ্ট্য। এবার তাহলে খুঁজে বের করো সেই গোপন সংখ্যা আর জিতে নাও উপহার।
এখানে উপরের সংখ্যারেখার ০ এবং তার ডান পাশের অংশ নিয়ে আমরা আলোচনা করব।
এখানে ২ এবং ৪ এর মধ্যে দূরত্ব কত? অবশ্যই এটি ২ একক। তুমি কি ২ এবং ৬ এর মধ্যে, ২ এবং ৭ এর মধ্যে দূরত্ব বলতে পারবে?
সংখ্যারেখায় তুমি দেখতে পাবে যে ৭ নম্বরটি ৪ এর ডানদিকে রয়েছে। এই ৭ নম্বরটি ৪ এর চেয়ে বড় অর্থ্যাৎ ৭ > ৪। ৮ নম্বরটি ৬ এর ডানদিকে রয়েছে এবং ৮ > ৬।
এই পর্যবেক্ষণ গুলি আমাদের বলতে সাহায্য করে যে, যে কোনো দুটি পূর্ণ সংখ্যার মধ্যে, ডানদিকের সংখ্যাটি বৃহত্তর সংখ্যা। আমরা আরও বলতে পারি যে, বাম দিকের পূর্ণ সংখ্যাটি ছোট সংখ্যা।
উদাহরণস্বরূপ, ৪ < ৯; ৯ এর বাম দিকে ৪ আছে। একইভাবে, ১২ > ৫; ১২ হলো ৫ এর ডানদিকে।
এবারে তুমি ১০ এববং ২০ সম্পর্কে মতামত দাও।
সংখ্যারেখায় ৩০, ১২, ১৮ চিহ্নিত করো। সবচেয়ে দূরে বাম দিকে কোন সংখ্যা? তুমি কি ১০০৫ এবং ৯৭৫৬ থেকে বলতে পারো, কোন নম্বরটি অন্য নম্বরের তুলনায় ডানদিকে হবে?
সংখ্যারেখায় ১২ এর পরের পূর্ণ সংখ্যা এবং ৭-এর আগের পূর্ণ সংখ্যা চিহ্নিত করো।
সংখ্যারেখায় পূর্ণ সংখ্যার যোগ দেখানো যেতে পারে। ৩ এবং ৪ এর যোগ দেখা যাক।
৩ থেকে শুরু করো। যেহেতু আমরা এই সংখ্যার সাথে ৪ যোগ করি, তাই ডানদিকে ৪ টি লাফ দাও; ৩ থেকে ৪, ৪ থেকে ৫, ৫ থেকে ৬ এবং ৬ থেকে ৭ পর্যন্ত (উপরের চিত্রে প্রদর্শিত)। ৪টি লাফের শেষ অবস্থান হবে ৭-এ।
সুতরাং, ৩ এবং ৪ এর যোগফল হবে ৭। অর্থাৎ ৩ + ৪ = ৭
সংখ্যারেখা ব্যবহার করে ৪ + ৫, ২ + ৬, ৩ + ৫ এ বং ১ + ৬ এই যোগফলগুলি চিহ্নিত করো।
দুটি পূর্ণ সংখ্যার বিয়োগ ও সংখ্যারেখায় দেখানো যেতে পারে। এসো ৭-৫ বের করি।
৭ থেকে শুরু করি। যেহেতু আমরা এই সংখ্যার ৫ বিয়োগ করব, তাই ইহা বামদিকে ১ টি লাফে ১ একক যাবে।
এরূপ ৫টি লাফে ২ বিন্দুতে গিয়ে পৌঁছবে।
সুতরাং ৭ এবং ৫ এর বিয়োগফল হবে ২। অর্থাৎ ৭ - ৫ = ২
সংখ্যারেখা ব্যবহার করে ৮-৩, ৬-২ এবং ৯-৬ এই বিয়োগফলগুলি চিহ্নিত করো।
এখন সংখ্যারেখায় পূর্ণ সংখ্যার গুণ দেখতে পাচ্ছি।
সংখ্যারেখা ব্যবহার করে এসো আমরা ৩ × ৪ বের করি।
০ থেকে শুরু করো, ডানদিকে একবারে ৩ টি একক লাফ দাও, এইরকম ৪ টি লাফ দিতে হবে।
কোথায় পৌঁছাবে বলো তো? ১২ তে।
তাই, আমরা বলি, ৩ × ৪ = ১২।
সংখ্যারেখা ব্যবহার করে ৬ × ২, ৬ × ৭ এবং ৫ × ৩ এই গুণফলগুলি নির্ণয় করো।
সংখ্যারেখায় আমরা যোগ, বিয়োগ ও গুণের ধারণা দেখেছি। এবারে দেখবো ভাগের ধারণা। ভাগ অর্থ ভাজ্য
থেকে বারবার করে ভাজককে বিয়োগ করা। এবং সবশেষে আমরা ভাজকের চেয়ে ছোট একটা সংখ্যায় পৌঁছালে সেটাকেই ভাগশেষ বলি।
এববারে তোমরা সংখ্যারেখার মাধ্যমে ১৩ কেকে ৪ দিয়ে ভাগ করে ভাগফল ও ভাগশেশেষ নির্ণয় করো।
এখানে, ভাজ্য = ২ এবং ভাজক = ০। ফলে, ২ থেকে ০ দৈর্ঘ্যের লাফ যতবারই দেওয়া হোক অর্থাৎ যতবারই
০ বিয়োগ করা হোক অবস্থান ২ ই হবে। কাজেই কখনোই এই বিয়োগ শেষ হবে না। ফলে ভাগ প্রক্রিয়া চলতেই
থাকবে। কোনো ভাগফলও পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ, ভাগ প্রক্রিয়ার সংজ্ঞা অনুসারে কোনো ভাগফল পাওয়া
যাচ্ছে না।
একারণে-
২ কেকে ০ দিয়ে ভাগ করলে সেটাকে আমরা অসংজ্ঞায়িত (Undefined)বলি। |
---|
একইভাবে ১, ৩, ৪, ৫, ৬, ১২ এরকম সব সংখ্যাকেই ০ দিয়ে ভাগ করলে আমরা অসংজ্ঞায়িত (Undefined)
বলবো।
কিন্তু, ০ কে ০ দিয়ে ভাগ করলে কী হবে?
এবারে কিন্তু একটু অন্যরকম ঘটনা ঘটল।
এখানে, ভাজ্য = ০ এবং ভাজক = ০। ফলে, ০ থেকে ০ দৈর্ঘ্যের লাফ যতবারই দেওয়া হোক অর্থাৎ যতবারই
০ বিয়োগ করা হোক অবস্থান ০ ই হবে। এমনকি কোনোরকম লাফ না দিলে অর্থাৎ একবারও ০ বিয়োগ না
করলেও একই ঘটনা ঘটবে। তাই ভাগফল ০, ১, ২, ৩, ৮, ১৫, ১৬ এভাবে অনেক কিছুই হতে পারে। এক্ষেত্রে
একটি নির্দিষ্ট ভাগফল নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
একারণে- ০ কে ০ দিয়ে ভাগ করলে সেটাকে আমরা অনির্ণেয় (Indeterminate) বলি।
যদি একটি পূর্ণসংখ্যাকে অন্য একটি পূর্ণ সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ ০ হয় তখন আমরা বলি প্রথম
সংখ্যাটি (ভাজ্য) দ্বিতীয় সংখ্যা (ভাজক) দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য।
সংখ্যারেখার সাহায্যে অথবা প্রচলিত পদ্ধতিতে ভাগ করে ১২ সংখ্যাটি ১, ২ ,৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ দ্বারা নিঃশেষে
বিভাজ্য কিনা যাচাই করো।
২ এর কয়েকটি গুণিতক লিখে পাই,
২×০ = ০, ২×১ = ২, ২×২ = ৪, ২×৩ = ৬, ২×৪ = ৮,
২×৫ = ১০, ২×৬ = ১২, ২×৭ = ১৪, ২×৮ = ১৬, ২×৯ = ১৮ ইত্যাদি।
গুণফলের প্রক্রিয়া লক্ষ্য করি। যে কোনো সংখ্যাকে ২ দ্বারা গুণ করলে গুণফলের একক স্থানীয় অঙ্কটি হবে ০, ২, ৪, ৬ বা ৮। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, কোনো সংখ্যার একক স্থানীয় অঙ্ক ০, ২, ৪, ৬ বা ৮ হলে, সংখ্যাটি ২ দ্বারা বিভাজ্য হবে। এবারে স্থানীয়মানের সাহায্যে দেখে নেই আমাদের পর্যবেক্ষণ সত্যি কিনা।
৩৫১৬ কে স্থানীয় মানে লিখলে হয়
৩৫১৬ = ৩০০০ + ৫০০ + ১০ + ৬
এখানে, একক স্থানীয় অঙ্ক = ৬, যা ২ দ্বারা বিভাজ্য। এছাড়া এককের বামদিকের যেকোনো অঙ্কের স্থানীয়
মান ২ দ্বারা বিভাজ্য।
অর্থাৎ একক স্থানীয় অঙ্কটি ২ দ্বারা বিভাজ্য হলে সংখ্যাটিও ২ দ্বারা বিভাজ্য।
এরূপ সংখ্যাকে আমরা জোড় সংখ্যা বলে জানি।
আবার, ৩৫১৭ কে স্থানীয় মানে লিখলে হয়
৩৫১৭ = ৩০০০ + ৫০০ + ১০ + ৭
এখানে, একক স্থানীয় অঙ্ক = ৭, যা ২ দ্বারা বিভাজ্য নয়। এছাড়া এককের বামদিকের যে কোনো অঙ্কের স্থানীয় মান ২ দ্বারা বিভাজ্য।
অর্থাৎ একক স্থানীয় অঙ্কটি ২ দ্বারা বিভাজ্য না হলে সংখ্যাটিও ২ দ্বারা বিভাজ্য হবে না।
এরূপ সংখ্যাকে আমরা বিজোড় সংখ্যা বলে জানি।
কোনো সংখ্যার একক স্থানীয় অঙ্ক শূন্য অথবা জোড় সংখ্যা হলে সংখ্যাটি ২ দ্বারা বিভাজ্য্য হবে। |
---|
৩৫১২ কে স্থানীয় মানে লিখলে হয়
৩৫১২ = ৩০০০ + ৫০০ + ১০ + ২
এখানে, ১০, ৪ দ্বারা বিভাজ্য নয়। কিন্তু দশকের বামদিকের যে কোনো অঙ্কের স্থানীয় মান ৪ দ্বারা বিভাজ্য।
আবার, ৩৫১২ = ৩০০০ + ৫০০ + ১২
এখানে, ১২, ৪ দ্বারা বিভাজ্য। সুতরাং ৩৫১২ সংখ্যাটি ৪ দ্বারা বিভাজ্য। অর্থাৎ একক ও দশক স্থানীয় অঙ্ক দুইটি দ্বারা গঠিত সংখ্যাটি ৪ দ্বারা বিভাজ্য হওয়ায় সংখ্যাটি ৪ দ্বারা বিভাজ্য।
কোনো সংখ্যার একক ও দশক স্থানের অঙ্ক দুইটি দ্বারা গঠিত সংখ্যা ৪ দ্বারা বিভাজ্য হলে, প্রদত্ত সংখ্যাটি ৪ দ্বারা বিভাজ্য হবে। অথবা একক ও দশক স্থানের অঙ্ক দুইটি শূন্য হলে, সংখ্যাটি ৪ দ্বারা বিভাজ্য। |
---|
👨👩👦👦 দলগত কাজ: ৮ দিয়ে বিভাজ্যতার নিয়ম স্থানীয়মানের সাহায্যে ব্যাখ্যা ও উপস্থাপন |
৫×০ = ০, ৫×১ = ৫, ৫×২ = ১০, ৫×৩ = ১৫, ৫×৪ = ২০, ৫×৫ = ২৫, ৫×৬ = ৩০, ৫×৭ = ৩৫, ৫×৮ = ৪০, ৫×৯ = ৪৫ ইত্যাদি।
গুণফলের প্রক্রিয়া লক্ষ্য করে দেখি যে, কোনো সংখ্যাকে ৫ দিয়ে গুণ করলে গুণফলের একক স্থানীয় অঙ্কটি
হবে ০ বা ৫। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, একক স্থানে ০ বা ৫ অঙ্কযুক্ত সংখ্যা ৫ দ্বারা বিভাজ্য হবে।
👤 একক কাজ: 5 দিয়ে বিভাজ্যতার নিয়ম স্থানীয়মানের সাহায্যে ব্যাখ্যা ও উপস্থাপন |
এখানে, ৪ × ৩ × ৩ এবং ১ × ৩ × ৩৩ সংখ্যাগুলো ৩ দ্বারা বিভাজ্য এবং একক, দশক ও শতক স্থানীয় অঙ্কগুলোর যোগফল = ১+৪ + ৭ = ১২; যা ৩ দ্বারা বিভাজ্য।
ফলে, ১৪৭ সংখ্যাটি ৩ দ্বারা বিভাজ্য।
আবার, ১৪৮ সংখ্যাটি বিবেচনা করি।
এখানে, ৪ × ৩ × ৩ এবং ১ × ৩ × ৩৩ সংখ্যাগুলো ৩ দ্বারা বিভাজ্য। কিন্তু একক, দশক ও শতক স্থানীয়
অঙ্কগুলোর যোগফল = ১ + ৪ + ৮ = ১৩; যা ৩ দ্বারা বিভাজ্য নয়।
ফলে, ১৪৮ সংখ্যাটি ৩ দ্বারা বিভাজ্য নয়।
কোনো সংখ্যার অঙ্কগুলোর যোগফল ৩ দ্বারা বিভাজ্য হলে, প্রদত্ত সংখ্যাটি ৩ দ্বারা বিভাজ্য হবে। |
---|
কোনো সংখ্যা ২ এবং ৩ দ্বারা বিভাজ্য হলে সংখ্যাটি ৬ দ্বারা বিভাজ্য হবে।
৩ ৭ ৮ সংখ্যাটি বিবেচনা করি।
এখানে, ৭ × ৯ ও ৩ × ৯ × ১১ প্রত্যেকে ৯ দ্বারা বিভাজ্য এবং একক, দশক ও শতক স্থানীয় অঙ্কগুলোর যোগফল = ৩ + ৭ + ৮ = ১৮, যা ৯ দ্বারা বিভাজ্য। ফলে, ৩৭৮ সংখ্যাটি ৯ দ্বারা বিভাজ্য।
কোনো সংখ্যার অঙ্কগুলোর যোগফল ৯ দ্বারা বিভাজ্য হলে, প্রদত্ত সংখ্যাটি ৯ দ্বারা বিভাজ্য হবে। |
---|
👨👩👦👦 দলগত কাজ: ১১ দিয়ে বিভাজ্যতার সহজ নিয়ম খজেুঁ বের করা |
---|
৩০৮, ১৩৩১ এবং ৬১৮০৯ সংখ্যাগুলি সবই ১১ দ্বারা বিভাজ্য।
নিচের সারণি ব্যবহার করে আমরা ১১ দিয়ে বিভাজ্যতার কোনো সহজ নিয়ম খুঁজে পাই কিনা দেখি।
সংখ্যা | ডান থেকে অঙ্কের যোগফল (বিজোড় জায়গায়) | ডান থেকে অঙ্কের যোগফল (জোড় জায়গায়) | পার্থক্য |
৩০৮ | ৮ + ৩ = ১১ | ০ | ১১ - ০ = ১১ |
১৩৩১ | ১ + ৩ = ৪ | ৩ + ১ | ৪ - ৪ = ০ |
৬১৮০৯ | ৯ + ৮ + ৬ = ২৩ | ০ + ১ = ১ | ২৩ - ১ = ২২ |
তোমার বন্ধুদের ম্যাজিকটি দেখাও। নিজের পরিবারের সদস্য, আত্মীয় স্বজন এবং প্রতিবেশীদের ম্যাজিকটি দেখাও। |
---|
সবুজ ঘরে পাওয়া সংখ্যাটি শিক্ষককে বলো। শিক্ষক তোমার বয়স বলে দিবেন।
তোমার বন্ধুদের ম্যাজিকটি দেখাও। নিজের পরিবারের সদস্য, আত্মীয় স্বজন এবং প্রতিবেশীদের ম্যাজিকটি দেখাও। |
---|